স্বর্ণার মৃত্যু



স্বর্ণা। অসাধারণ সুন্দরী মেয়ে। দেখলে মনে হয় বিধাতা স্পেশালিটি দিয়ে নিজ হস্তে সৃজন করেছেন। রূপে-গুণে ও চলনে-বলনে পাড়ার সবার মুখে মুখে। আজকাল লোকমুখে তার প্রশংসা চর্চা হয়।

স্বর্ণার চুল দেখে পাড়ার অন্য মেয়েদের হৃদয়ে ঈর্ষার জীবাণু কিলবিল করে।স্বণা ও ভাবে, শ্যামলা বর্ণ অন্য আট-দশটা সাধারণ বাঙালি মেয়ের মতো যদি বিধাতা তাকেও বানাতে!
তাহলে দুষ্ট মানবের দৃষ্টি থেকে বাঁচা যেত। কিন্তু এমনটি হয়নি।
 মাঝেমধ্যে স্বর্ণাকে উঠানে চি বুড়ি খেলতে দেখা যায়। খোলা চুলে চি দিলে স্বর্ণাকে দারুন লাগে।

নতুন বাড়িতে উঠেছে স্বর্ণারা। আগে কোথায় ছিল তা অজানা।পাশের বাঙ্গলো বাড়ির বকুল ফুলের গন্ধে স্বর্ণা মুগ্ধ। দেয়াল টপকে ফুল কুঁড়ানোর কথা অনেকদিন ভেবেছে। কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি। স্বর্ণার অনেক দিনের সখ নিজ হাতে বকুল মালা গাঁথার।
 তাই আজ এত সকালে ওঠা।
অলস ভঙ্গিতে দেয়ালের পাশে পায়চারি করছে ।স্বর্ণা ও পাশের বকুলের লোভ আর সামলাতে পারল না।

বকুলতলা কারো যাতায়াত নেই বলে হাঁটু উঁচু ঘাস গজিয়েছে ওদিকটায়। কুয়াশা কেটে রোদ উঠেছে।ধানী রঙের নরম রোদ। তবুও ঘাসের উপর শিশির কণা।
স্বর্ণা  নিচু হয়ে ফুল কুঁড়াচ্ছে।
শিশির ভেজা মাটি থেকে এক ধরনের আর্দ্র গন্ধ আসছে। তবুও বকুলের গন্ধে চারদিক মৌ মৌ করছে।

 হঠাৎ স্বর্ণার চিৎকার ভেসে এলো।
সাপ, সাপ...
স্বর্ণা কে সাপে কেটেছে। বিষব্যথায় কাৎরাচ্ছে স্বর্ণা। পরীর মত ধবধবে সাদা গাল, গোলাপি ঠোঁট নীল বর্ণ হয়ে গেছে।
বিকাল হয়ে গেল।কিন্তু বিষ নামানোর জন্য কোথাও সাপুরে খুঁজে পাওয়া গেল না। সমস্ত শরীর মনে হচ্ছে অবশ হয়ে যাচ্ছে। মাথার চিনচিনে ব্যথা ক্রমশ তীব্র ও তীক্ষ্ণ হয়ে উঠেছে। পিপাসায় বুক-মুখ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।পরিবারবর্গ এক ফোটা পানি দিতে ও নারাজ । ঠান্ডায় নাকি বিষ তীব্র হয়।এভাবেই কাটছে মুহূর্ত।
সংকোচিত ভঙ্গিতে স্বর্ণার মাথার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে তার কপালে।
অবশেষে,
বিষ ব্যথায় ছটফট করতে করতে চলেগেছে সবাইকে ছেড়ে।

আজও বকুল গাছ, খেলার উঠোন, পুরনো বাড়ি সবই আছে। কিন্তু ৬ ( ছয় ) বছরের ছোট রূপবতী স্বর্ণা আজ আর নেই।

Comments

Popular posts from this blog

আল্লামা আহমদ শফীর সহপাঠি আল্লামা আবদুল আলিম আল হোসাইনীর ইন্তেকাল